শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০২৫

নতুন দল

পৃথিবীর সবচাইতে প্রাচীন দল ইংল্যান্ডের দি টোরিজ, আর সবচেয়ে নবীন দল যেটা আজকে গঠিত হবে- জাতীয় নাগরিক পার্টি সংক্ষেপে এনসিপি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন দলকে শুভকামনা।
অনেকদিন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল, এখন ঠিক করেছে দল গঠন করবে। ৯০'এর গণ অভ্যুত্থানের ধরন ও প্রেক্ষিত আলাদা ছিল। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোই বিশেষত তাদের ছাত্রসংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে এরশাদের পতন ঘটিয়েছিল। তিন-জোটের-রূপরেখা নামে একটা চার্টার ছিল , স্বৈরাচার পতনের পরে কী কী করা হবে সেই বিষয়ে। সেই চার্টারে ভরসা রেখে আমরা জনগণ স্বপ্ন দেখেছিলাম যে, সকল অশুভ শক্তি দেশ থেকে বুঝি পরাভূত হয়ে গেল। কিন্তু হায়। ৪৭ থেকে ৯০ কম পথ তো নয়, এরমধ্যে সামরিক-বেসমরিক মিলে কত নাটক মঞ্চায়িত হলো এই পোড়া দেশে। মানুষের মুক্তি আর হইল না।
দলও গঠন হয়েছে বিস্তর , প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে। একেক দলের একেক রকম ভাবাদর্শ। ভাবাদর্শগুলো অবশ্য নামকাওয়াস্তে। যে দল ( যেমন জাসদ ইনু) সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব কায়েম করবে, সে কিনা একটা মন্ত্রীত্ব কিংবা এমপি পদের জন্য হাসিনার পা ধরে। বাসদ নামের দলটি- যারা বিপ্লবের পক্ষে কিন্তু ভোটের বিপক্ষে, তারাও দেখি হাসিনার জোটে শরীক হয়ে ভোট করে। মুখে সবাই সাম্য এবং মৈত্রির কথা বলে, বাস্তবে ব্যস্ত থাকে হালুয়া-রুটির ভাগাভাগিতে। বাম-ডান মিলে অসংখ্য দল তৈরি হয়েছে, আবার বিলীন হয়ে গেছে। যে মুসলিমলীগ পাকিস্তান তৈরি করেছিল, তারা ৫৪'র নির্বাচনে ২৩৭ এর মধ্যে ৯ টো আসন পায়।
বিভিন্ন প্রেক্ষিতে দল তৈরি হয়। কখনও মহান লক্ষ্য নিয়ে, কখনও খুচড়া কারণে। পাকিস্তান তৈরি হওয়ার অব্যবহিত পরেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য প্রকট হওয়ায় সোহরাওয়ার্দী, ভাসানী, মুজিব মিলে আওয়ামীলীগ তৈরি করে। মুসলিম লীগ থেকে বের হয়ে নতুন দল গঠন করাই সমীচীন মনে করেন তারা। এতে অবশ্য একটা লাভ হয়। রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্মেষ ঘটে। মুসলিম লীগ থাকলে আমাদের আর "সাধের লাউ" গান গাওয়া লাগত না। মনে নেই ১৯৬৭ সালে রেডিওতে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধ করা হয়। আসলে পূর্ববঙ্গের সংস্কৃতি আর পশ্চিম পাকিস্তানের সংস্কৃতি কোনমতেই এক নয়। পাকিস্তানিরা মিডল-ইস্টের আরও নিকটে, আরবদের মত তাদের নাক লম্বা, তারা পোলাওয়ে গোলাপজল দেয়, রাইতা দিয়ে কাবাব খায়, গজল শোনে ও সপ্তাহে একদিন গোসল করে। অন্যদিকে আমরা শীতের মধ্যেও প্রতিদিন পুকুরে ডুব দেই, ছোট মাছের চচ্চরি খাই, পান্তাভাত লাগেই, শীতে পিঠাপুলি,একতারায় বাউলের গান। কাজেই দেশ স্বাধীন হবেই এবং হয়েছেও। ষাটের দশক উত্তাল রেখেছে আওয়ামীলীগ, মেজর বামপন্থী দল, আওয়ামীলীগ থেকে সড়ে আসা ন্যাপ মিলে। সেই সময়ে কিউবা, ভিয়েতনাম, চীন এবং সর্বপরি নকশাল আন্দোলনের প্রভাবে প্রগতিশীল বামপন্থী শক্তির ভালই উদ্ভব ঘটে।
স্বাধীনতার পরে বিশাল ধাক্কা খায় দেশ। আমলাদের অসহযোগিতা, আওয়ামীলীগের দেশ চালাতে অদক্ষতা, অনেকের অস্ত্র জমা না দেয়া, লুটপাট, কারখানার যন্ত্রাংশ বিক্রি, ব্যাংকের ভল্ট খালি করা ইত্যকার নানা সমস্যায় জর্জরিত হয় দেশ। সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকিস্তান-ফেরতদের বৈরিতা শুরু হয়। ওদিকে সেনাবাহিনীর মধ্যে কর্নেল তাহেরের বিপ্লবী শসস্ত্র অভ্যুত্থানের বাসনা এবং প্রস্তুতি চলে। লীগের একটা অংশ ছিটকে গিয়ে জাসদ গঠন এবং আওয়ামীলীগকে দৌঁড়ের উপর রাখে। অন্যদিকে সিরাজ শিকদার শ্রেণিশত্রু খতম করতে শুরু করে। সাতকোটি লোকের জন্য আটকোটি কম্বল আসলেও সব কম্বল পরিশেষে চুরি হয়ে যায়, সবমিলিয়ে হজপজ একটা অবস্থা। ফলশ্রুতিতে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ নামে। এই অবস্থায় কে বা কারা বঙ্গবন্ধুকে বাকশাল গঠন করার পরামর্শ দেয় অথবা তার নিজের মাথায় আসে আইডিয়াটা - ইতিহাসের চরম একটা ভুল। বাকশাল এমনিতেই থাকত না কারণ বিষয়টা ন্যাচারাল নয়। মাঝখানে পুরো পরিবার শেষ।
তারপর বিএনপির জন্ম। আমি অবশ্য ছোটদলগুলোর জন্মের কথাও বলতে চাই, কিন্তু পোস্ট বড় হবে বিধায় সম্ভব নয় যেমন দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল, মনে আছে দিলীপ বড়ুয়াকে ? ঐ যে বক্তব্য দিতে গিয়ে পায়জামা খুলে পড়ে গিয়েছিল। কিংবা কল্যান পার্টির কথা মনে আছে? মোছওয়ালা ঈব্রাহিম সাহেব, বিট্রে করে ২৪ এর নির্বাচনে গিয়েছিল। কিংবা অলি আহমেদের এলডিপি, অথবা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, ডঃ কামালের গণফোরাম, এমনকি যে দরবেশবাবা জেলে, সেও একটা দল করেছিল স্ব-নির্ভর বাংলাদেশ বলে, মাছমার্কা প্রতীকে নির্বাচনও করেছিল।
যাইহোক বিএনপির কথা বলছিলাম। যেখানে বড় দল ভেঙ্গে টুকরা হয়ে ছোট দলের সৃষ্টি হয়, সেখানে নানা মতের নানা পথের মানুষ ধরে নিয়ে এসে একটি দল গঠন করা দুরূহ বিষয় হলেও জিয়া সেটি যথেষ্ট দক্ষতার সাথে করতে পেরেছিলেন। সাথে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। মোটকথা বাকশাল বাতিল হয়ে আগের অবস্থা জারি হয়েছে আবার। সাধারণ মানুষ জিয়ার সাথে ছিল। ক্যাপ মাথায় দিয়ে, একটা রে-বেন সানগ্লাস পরে ছাদখোলা জিপ গাড়িতে চড়ে সারাদেশ চষে বেড়িয়েছেন। কিন্তু তাকেও মেরে ফেলা হয়। সারা দেশের মানুষ কেঁদেছিল সেদিন। আমি ছোট ক্লাশে ছিলাম, খবর শুনেই স্কুল ছুটি দেয়, স্কুল থেকে হেঁটে যখন বাড়ি আসছিলাম, চারপাশে দেখছিলাম সবকিছুই স্তব্ধ।
এরপরে আসে জাতীয় পার্টি। এরশাদ অনেক দোষে দোষী হলেও, নয়বছর কিন্তু গদিতে টিকে ছিল। ভারতের আশীর্বাদপুষ্টে নাকি স্বীয়-যোগ্যতায় তা অবশ্য বলতে পারব না, তবে নয় বছরে ভারতকে চটিয়ে কিছুই করেনি। অবকাঠামো বিশেষ করে রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়,উপজেলা তৈরি হয়। দোষে-গুণের এরশাদের দোষের পাল্লাই ভারী ছিল। নারীদোষ, কবিতাচুরি, এবং কথা-না-রাখার বিষয়ে বিখ্যাত ছিল। কীভাবে ভোট-ডাকাতি করত নিজের চোখেই দেখেছি। দিনে দিনে স্বৈরাচার হয়ে ওঠে সে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ে ছাত্রদের মিছিলে ট্রাক তুলে দেয়। অবশেষে পতন এবং জেল। পালাতে পারেনি কিংবা চায়নি বিষয়টা ঠিক জানা নেই। তবে রংপুরের মানুষের সিমপ্যাথি ছিল তার প্রতি অযথাই। জেলে থেকে ভোট করেও ৩৫ আসন পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। একটা ভাল দল হতে পারত,
দলটাকে নষ্ট করেছে তার ভাই কাদের এবং স্ত্রী রওশন। গত পনের বছরে জাতীয় পার্টি যদি বিন্দুমাত্র কোমড় সোজা করে থাকতে পারত, হাসিনার পক্ষে এতবড় ফ্যাসিস্ট হওয়া সম্ভব ছিল না।
এখন মাঠ ফাঁকা । বিএনপির বিরুদ্ধে একটা মানসম্পন্ন বিরোধীদল খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হবে। অনেকে জামাতের কথা বলছে। ৯৬ সনের কথা ভাবুন, জামাত একা নির্বাচন করে ৩ টি আসন পেয়েছিল। অবশ্য পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামাতের সিট বাড়বে কিনা জানিনা, বাড়লে আর কত বাড়বে?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নতুন দল আগামী নির্বাচনে কেমন রেজাল্ট করবে জানি না। কর্মী সংগ্রহ আছে, দল গোছানো আছে, তা ছাড়া আওয়ামীলীগ যদি নির্বাচন করতে না পারে, তাহলে আওয়ামীলীগের সমর্থক আর যাকে ভোট দিক মরে গেলেও ছাত্রদের দলকে ভোট দিবে না। ছাত্রদের উপর দুনিয়ার রাগ জমা হয়ে আছে তাদের অন্তরে। নতুন দলের ভোট আসবে নন-আওয়ামীলীগদের থেকেই। তবে প্রথম নির্বাচনটা তো বড় কথা নয়। যারা হাসিনার মত দানবকে ৩৬ দিনে টেনে নামিয়েছে তাদের মধ্যে পটেনশিয়াল আছে। একতা বজায় রাখলে আগামীতে তারা ভাল করবেই। তাদের দল গঠনের প্রেক্ষিত অন্য অনেক দলের চেয়ে অনেকাংশে জোড়াল। ছোটখাটো ভুল হবে, বড়সড় ভুল হবে, অনেকেই পথচ্যুত হবে, অনেকেই পথে ফিরে আসবে, এভাবেই দিনে দিনে মহিরুহু বৃক্ষে পরিণত হবে।
ক্যালগেরি


Like
Comment
Send
Share

সোমবার, ফেব্রুয়ারী ২৪, ২০২৫

আমার জন্মদিন ও থার্মোডাইনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র


ভাবছেন, এ দুটোর মধ্যে আবার সম্পর্ক কী? একটু পরেই ব্যাখ্যা করছি। প্রথমত আজ আমার জন্মদিন, মনে ছিল না। যেহেতু ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম ফ্রেমওয়ার্কের অধীন, আমার তথাকথিত অফিস থেকে সতীর্থদের ডিজিটাল উইশ আশা শুরু করল অবিরাম গতিতে। কাহাতক আর ভুলে থাকা যায় ? এনিওয়ে, হ্যাপি বার্থ-ডে টু মি।
জন্মদিন নিয়ে আমার ব্যতিব্যস্ত হওয়া কী মানায়? তিনকুল তো পার হয়ে গেল। মেয়েরা স্কুল থেকে এসে চুপ করে হাতেলেখা কার্ড বানাবে, এটা বলে দেয়া যায়, এটুকু ফর-গ্রান্টেড, প্রকৃতি বাপদের-প্রতি-মেয়েদের ভালবাসা এভাবেই ডিজাইন করে রেখেছে। কেক-টেক কাটা হবে কিনা এখনো বলতে পারছি না। যদি কেক আনা হয়, কাটব, অসুবিধা কী?
হ্যাঁ ফিজিক্সের কঠিন সূত্রটির বিষয়ে আসি। সত্য ঘটনা। আমি তখন ফোরে পড়ি। আব্বার সাথে বাজারে যাই। অনেকদূর হেঁটে গোশালা বাজারে যেতে হয়। একজায়গায় ইটের ভাটা ছিল, রাস্তার বামপাশে। অন্যপাশে আবুল এমপির বাঁশের ঝার এবং একটি কাকচক্ষু জলের দীঘি। সেই জায়গাটায় এসে আব্বাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আব্বা আমার জন্মদিন কবে? আব্বা সঠিক জবাব দিতে পারে নাই, কারণ যেই ডায়েরিতে তারিখটা লেখা ছিল তা কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে ? আব্বা বলেছিল, তাতে কী? আসলে জন্মদিন বিষয়ে কোন ব্যাপার থাকার কথা নয়। কারণ আমরা যে বছর হিসাব করি তা পুরোপুরি আপেক্ষিক একটি বিষয়। আমাদের গ্রহ ৩৬৫ দিনে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে। প্রতিটি জন্মের ৩৬৫ দিন পরে যা ঘটবে তা হচ্ছে একই রকম আবহাওয়া পাওয়া যাবে, কারণ পৃথিবী সূর্য থেকে একই রকম দূরত্বে অবস্থান করবে। সময় হচ্ছে পরিপূর্ণ আলাদা একটা জিনিস। এটা ফিরে আসে না, কোনদিনও নয়। আব্বা যেটা বলতে চেয়েছিল, সময় পরম, এর যাত্রা কোন একসময় শুরু হয়েছিল, কোন একসময় হয়ত শেষ হবে।
এখানে বলে রাখি, আব্বা ছিল আর্টসের ছাত্র। অথচ সময় নিয়ে তার ব্যাখ্যা প্রায় পুরোপুরি ঠিক। সময় এবং স্থান সৃষ্টি হয়েছিল ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং থেকে। তার আগে কিছু ছিল না। সময় একটি নদীর মত, একদিকে প্রবাহিত হয়। সময়কে খুব সহজ বিষয় মনে হলেও একে সংজ্ঞায়িত করা ছিল খুব কঠিন। ইংল্যান্ডে যখন বাষ্প-ইঞ্জিন আবিষ্কার হয় তখন একটা সমস্যা দেখা দিল। সেটা হচ্ছে প্রচুর কয়লা চুলায় ঢালতে হচ্ছে টারবাইন ঘুরানোর জন্য। আমরা ছোটবেলায় এটি দেখেছি লালমনিরহাটে। তখন কয়লার ইঞ্জিন ছিল, ইঞ্জিন রুমে দুজন খালাসি লুঙ্গি মালকোচা করে সর্বদা বেলচি দিয়ে চুলায় কয়লা ঢালত। তবেই স্টিম তৈরি হত এবং ট্রেন চলত। এই বাষ্পীয় ইঞ্জিন ছিল খুবই আনএফিসিয়েন্ট। যে হারে কয়লা ঢালা হত চুলায়, বাষ্পও উৎপাদিত হত ভালই, কিন্তু কোন এক চোরাকারণে পুরো বাষ্পকে কাজে লাগানো যেত না। বেশিরভাগ বাষ্প লিক হয়ে যেত। এই বিষয় নিয়ে সেই সময়কার বিজ্ঞানীরা মাথা চুলকিয়েছে অনেক, কেন এমন হচ্ছে? এবং পরিশেষে তা ব্যাখ্যা করা গিয়েছে থার্মোডাইনামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র দিয়ে। সেই সূত্র কিন্তু খুব কঠিন। আমি বুয়েটে দুটো সাবজেক্ট পড়েছি থার্মোডাইনামিক্সে উপর, তবুও এখনো বিষয়টাকে ঝাপসা লাগে। কাজেই সেটার ব্যাখ্যা শুনলে সম্মানিত পাঠকরা পালাবে। তবুও সহজতর ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছি।
থার্মোডানামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র থেকে একটি বিষয় এসেছে যার নাম এনট্রপি। এটি এমন এক জিনিস যার মান শুধু বাড়তেই থাকে। মানে এখনো বাড়ছে। সৃষ্টির শুরুতে হয়ত জিরো দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল, তারপর প্রতিদিন বাড়ছে , এমনকি প্রতি মূহুর্তেই বেড়ে চলেছে। এনট্রপি তখনই বাড়বে যখন অর্ডার (শৃঙ্খল) থেকে ডিসঅর্ডার (বিশৃঙ্খল) অবস্থায় পৃথিবী যাবে (আসলে পুরো বিশ্ব যাবে)। তারমানে হচ্ছে আমরা প্রতিটি দিনে, প্রতিটি মুহুর্তে শৃঙ্খলা থেকে বিশৃঙ্খলার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। সৃষ্টির শুরুতে পুরো বিশ্ব সবচেয়ে সুশৃংখল ছিল। তারপর প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খল হচ্ছে। একটা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে। আপনার হাতে একটি কাঁচের গ্লাস আছে। অসতর্কতা বশত সেটি মেঝেতে পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে খানখান হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। এটি হচ্ছে শৃঙ্খল থেকে বিশৃঙ্খল হওয়ার পকৃষ্ট উদাহরণ, অর্থ্যাৎ ছোট পরিসরে এনট্রপি বাড়ল। কোন অবস্থাতেই কিন্তু কাঁচের টুকরোগুলো উল্টোদিকে গিয়ে জোড়া লাগবে না, যদি লাগত তাহলে সময় উল্টোদিকে যাত্রা করতে পারত, এনট্রপি বাড়ার পরিবর্তে কমতেও পারত। কিন্তু সেটি হয়না। কাজেই সময়ের সঠিক সংজ্ঞা এখন আমরা দিতেই পারি। সময় হচ্ছে প্রতিনিয়ত এনট্রপি বাড়া, সেকেন্ড-ল-অফ-থার্মোডাইনামিক্স। এই বিশ্ব প্রতিনিয়ত শৃঙ্খল থেকে বিশৃঙ্খল হবে, সেটাই সময়। একটি সুন্দর শহর একসময় ধ্বংস হবে, আমাদের এই পৃথিবীও একসময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, কারণ সূযের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে (হাইড্রোজেন থেকে হিলিয়াম তৈরি বন্ধ হলে) আইনস্টাইনে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সূর্যকে টেক-ওভার করবে। সাদা বামনে পরিণত হওয়ার আগে সূর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়ে আমাদের পৃথিবীসহ সবগ্রহকে খেয়ে ফেলবে। আমরা থাকব সূর্যের পেটের ভিতর। তারপর একসময় সাদা বামন হবে সূর্য। তারপর একসময় কালো বামন, তারপর ব্লাক হোল। সব নক্ষত্রের পরিণতি তাই-ই। ব্লাকহোলগুলো একসময় শক্তি বিকিরণ করতে করতে শেষ হয়ে যাবে। তারপর এই বিশ্বের কোথাও এক কণা শক্তিও অবশিষ্ট থাকবে না। বিশ্ব হবে নিথর বিরানভূমি, হুমাউন আহমদের নাটক কোথাও-কেউ-নেইয়ের মত, ফিজিক্সের ভাষায় একে বলে হিট-ডেথ। সব শেষ। এনট্রপি আর বাড়বে না। থমকে যাবে সময়।
কাজে কাজেই, বার্থডে ফিরে আসে না বৎস, সময়ের তীর একদিকেই ছোটে। যে মাহেন্দ্রক্ষণে আমি জন্মেছিলাম, সেই ক্ষণ আর আসবে না। বরং বলতে পারি আমি ২৫ ফেব্রুয়ারি তিস্তার বসুনিয়া বাড়িতে জন্মেছিলাম, সেইদিনটা ছিল শীত শীত। আজকেও একই রকম আবহাওয়া। এতটুকুই।
ক্যালগেরি
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ইং