Sunday, October 24, 2021

পাহাড়ি ঝর্ণা - ২

(ভ্রমণ)

বিশ বছর আগে রাজু নামের এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ছেলেটি ছিল গ্যাংটকের একটি হোটেলের এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার। আসামের ছেলে। আসামের এক-তৃতীয়ংশ মানুষ বাংলা বলে, রাজু তারমধ্যে পড়েছে। কাজেই আলাপ-পরিচয় হয়ে উঠল। রাত দশটার পরে সব ট্যুরিস্ট বিছানায় কুপোকাৎ। রাজু তখন আমার রুমে আসতো গল্প করতে। জানতে পারলাম ছেলেটি ছোটবেলায় আসামের জঙ্গল থেকে গ্রেট হিমালয়ের দিকে ধ্যানমগ্নের মতো তাকিয়ে থাকতো, ভাবতো একদিন ওখানে চলে যাবে। পাহাড় ওকে টানতো। আমি রাজুর সাথে আমার মিল খুঁজে পেলাম। শরৎকাল আমাদের বাড়ি থেকে হিমালয় দেখা যেত, স্পষ্ট নয়, তবে ইগনোরও করা যেত না । রাজুর মতো আমিও পাহাড় দেখে উদাসী হতাম। তবে ওর মতো পাহাড়ের কাছে গিয়ে সারাজীবনের জন্য আত্মসমর্পণ করার ইচ্ছা কখনো জাগেনি। ঠিক করে রেখেছিলাম হাতে পয়সা এলে হিমালয়ে যাবো। সেটা গিয়েছি।
হিমালয় দেখেছি, আল্পস দেখেছি, রকি দেখেছি। এছাড়া খুচরা কত যে পাহাড় দেখেছি। পাহাড়কে নিয়ে আমার আদিখ্যেতা এখনও বহাল আছে। পাহাড়ের গায়ে জড়িয়ে থাকে ঘন অরণ্য। আরণ্যকে মেলারকম শব্দের উৎপত্তি হয়। কখনো পাহাড়ি ঝিঁঝিঁপোকা, কখনও ভল্লুকের শুকনো পাতা মাড়ানো, কখনও বয়ে চলা ঝর্ণার শব্দ, এবং অবশ্যই পাহাড়ি নদীর শব্দ। পাহাড়ের অন্তর্গত সৌন্দর্য পরিপূর্ণ করার জন্য একটা নদীর উপস্থিতি জরুরী হয়ে পড়ে। সেরকম একটা নদী আমাদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ থেকেই লুকোচুরি খেলছে। কখনও হাইওয়ের একেবারে কাছে এসে পড়ে, কখনও অরণ্যকে সামনে ঠেলে দিয়ে কোথায় যেন কেটে পড়ে।
একবার কফি-ব্রেকে সালাহউদ্দিন ভাই রেগে গেলেন। বললেন পাশে এত সুন্দর একটা নদী বয়ে চলছে আর তুমি একবারও থামলে না? আমি বললাম সামনে নিশ্চয়ই থামার জায়গা পাবো।
আমরা গাড়ি চালাচ্ছি,নদী আমাদের সাথেই আছে। নদীটি টাটকা,মনে হবে এখনি ওভেন থেকে নামানো হয়েছে। ওর পানির রং ডাবের পানির মতো ঘোলাটে-সাদা।
আমার স্ত্রী একসময় বলল যদি নদীর পানি স্পর্শ করতে পারতো। এইবার আমি সিরিয়াস হলাম। বৌয়ের এই আবদার আমার একদম সামর্থ্যের মধ্যে।

No comments:

Post a Comment