(ভ্রমণ)
রকি পাহাড়ে অনেক দৃষ্টিনন্দন লেক আছে। কিছু লেক বিখ্যাত, সবাই দেখতে যায়, কিছু অখ্যাত। ছবির এই লেকটি অখ্যাত, কালেভদ্রে কেউ এখানে বেড়াতে আসে। জায়গাটি অমানবিক রকম নির্জন। এর একটা ভৌতিক কারণ আছে বলে আমি মনে করি। কেন এমন মনে করছি সেটা পোস্টের শেষে থাকবে।
নির্জনতার জন্য সদ্য বিবাহিত স্বামী-স্ত্রী এই লেকটাকে পছন্দ করে। তাই এর নাম হানিমুন লেক। আশেপাশে হোটেল বা কটেজ কিছুই নেই। এখানে যারা কয়েকদিনের জন্য আসে তারা সঙ্গে তাবু বা ক্যাম্পার নিয়ে আসে।
নিচের ছবিটি ২০০৯ সালে তোলা, বৌসহ এসেছিলাম। তখন আমাদের বিয়ের বয়স পাঁচ , তাই হানিমুন কোটায় পড়ি নাই। এরকম চমৎকার একটি জায়গায় দুজনে একসাথে একটি ছবিও তুলতে পারিনি। কারণ হচ্ছে - তখন সেলফি ক্যামেরা ছিল না। এই ছবিটি সনি সাইবারশট নামে এক ক্যামেরা দিয়ে তোলা। বৌ আমার ছবি তুলে দিয়েছে, আমিও তারটা তুলেছি ,ভাইস-ভারসা। আশেপাশে লোকজন থাকলে তাদেরকে রিকোয়েস্ট করতাম, কিন্তু কেউ ছিল না, যে একজন ছিল সে নিশ্চয়ই আমাদের মতো রক্ত মাংসের কেউ নয়। ভুতের বিষয়টায় পরে আসছি। স্টে-টিউনড।
২০০৯ সালে আমাদের সন্তান ছিলনা। এখন দুজন রাজকন্যা আছে। উপরের ছবিটিতে তাদেরকে দেখছেন। এই ছবিটি কয়েকদিন আগের তোলা।
দুটো ছবিতে কোন পার্থক্য দেখছেন? উপরে তাকিয়ে দেখুন, আগের ছবিতে পাহাড়ের চূড়ায় বরফ ছিল, একযুগের ব্যবধানে সেই বরফ হাপিস হয়ে গেছে। একেই বলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং। বিষয়টা কত দ্রুত ঘটে যাচ্ছে মশাই ভাবতে পারেন?এখনো সময় আছে গাছটাছ লাগান, কম করে তেল পোড়ান। ইউরোপকে দেখে শিক্ষা নিন। ওরা যেভাবে সবুজ হচ্ছে সেটা হিংসে করার মতো।
এবার ভৌতিক ব্যাপারটায় আসি। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার সামনেই একটি ঘাট আছে। সেখানে একটা খেয়া নৌকা বাঁধা থাকে। কাঠের লগ দিয়ে একটা লম্বা ডেক করা হয়েছে। সেই ডেকের মাথায় ২০০৯ সালে একটি নারীকে বসে থাকতে দেখেছিলাম। একেবারে অনড়, মনে হচ্ছিল যেন মূর্তি। সোনালি চুলের এক তরুণী। মেয়েটির সাথে কোন ছেলেবন্ধু ছিল না। সে ছিল একদম একা। বাড়ি থেকে গণ্ডগোল করে এসেছে কিনা কে জানে? যদি পানিতে ঝাপ দেয়?সেইবার মেয়েটির খুব কাছে গিয়ে গলা খাকারি দিয়েছিলাম তার মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য, যদি একটা ছবি তুলে দেয়। কিন্তু সেই নারী পিছন ফিরে তাকায়নি। একটুও নড়েনি। আমার কেমন যেন একটু গা শিওরে উঠেছিল। কী কারণে জানিনা।
এইবার বারো বছর পরে হাইওয়ে দিয়ে যাবার সময় গাছের পাতার আড়ালে ছোট একটা সাইন দেখলাম- হানিমুন লেক। একটা সরু পাহাড়ি রাস্তা জঙ্গলের মধ্যে হাড়িয়ে গেছে। আমি সাইনটি পার হয়ে গিয়ে কী মনে করে গাড়ি থামালাম। সালাহউদ্দিন ভাই আমাকে ফলো করছিলেন। উনিও ঘ্যাচ করে ব্রেক কষলেন। আমি ইউটার্ন নিয়ে সেই সরু রাস্তায় ঢুকে পড়লাম। আগেকার অনেক স্মৃতি মনে পড়ল। আমার স্ত্রী বলল, কী আশ্চর্য ব্যাপার সেই হানিমুন লেক?
সেইবার সন্ধ্যা ছিল। আজকেও তাই, চারপাশে টোয়াইলাইটের আলো। আমি গাড়ি থেকে নেমেই থমকে দাঁড়ালাম। একই যায়গায় একই ভঙ্গিমায় সেই নারীমূর্তি। সোনালি চুলের তরুণী। সালাহউদ্দিন ভাইকে বিষয়টা বলায় উনি বললেন, বিষয়টা তো ভৌতিক। চলো আমরা আর ওদিকে না যাই, কী দরকার ?
আমি আধিভৌতিক কিছুই বিশ্বাস করি না। তবুও আমার মনটা খচখচ করে উঠলো।