Monday, September 30, 2013

সেবা মূলক অর্থনীতি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ

অবাক হয়ে দেখি , কিভাবে আমরা কৃষি এবং পন্য ভিত্তিক অর্থনীতি থেকে সেবামূলক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হচ্ছি , আজ দেশের অর্ধেকের বেশি জিডিপি contribution এই সেবমূলক সেক্টর থেকে , শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত এবং উন্নয়নশীল সব দেশই শিফট করছে এই সেবামূলক অর্থনীতিতে , কোথায় যেন পড়লাম , IBM এর মত বড় কমপনির ভ্যালু এখন প্রোডাক্ট (যেমন hardware ) থেকে নয় বরং সার্ভিস থেকে এবং non tangible আইটেম যেমন সফ্টওয়্যার থেকে । আজ ইউএস এ এর অর্থনীতি প্রায় ভিত্তিবদ্ধ এই সার্ভিস related অর্থনীতিতে । একদিন ভাবলাম খুব একটা সহজ পরীক্ষা করব , তা হল , সারাদিন আমি যা খরচ করি তার কত অংশ পন্ন কিনতে এবং কত অংশ সেবা কিনতে খরচ করি , শেষে দেখলাম , শুধু খাবার এর বাজার ছাড়া সব ই গেছে সেবা কিনতে , যেমন মোবাইল এর বিল , সিএনজি ভাড়া , সিনেমার টিকেট , টিভি দেখলাম কাজেই dish এর বিল এর একটা অংশ, গ্রামে বসে ইন্টারনেট বাবহার করব , কাজেই ইউএসবি স্টিক এর খরচ , মোটকথা সেবা কিনতেই খরচ বেশি । আশি এবং নব্বই এর দশকে , চারপাশে দেখতাম বেকরত্তের অভিশাপ , ঢাকা বিশশবিদ্যালয় থেকে পাস করে কত জনকে বেকার বসে থাকতে দেখেছি , আর আজ? গ্রামের ছোট কলেজ অথবা অক্ষাত প্রাইভেট বিশশবিদ্যালয় থেকে পাস করেও চাকরি করছে আমাদের যুবকরা , এর সবই সম্বব হয়েছে এই সেবা মূলক সেক্টর এর মধ্যমে । আমাদের দেশে সেবামূলক সেক্টর মানেই wholesale, ট্রেডিং , transportation , কম্যুনিকেশন যেমন বিশাল মোবাইল নেটওয়ার্ক , সরকারী সোসাল সার্ভিস যেমন শিক্ষা , স্বাস্থ্য সেবা , পাবলিক administration এবং defense এসবকেই বুঝায় । হালে ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস যেমন ব্যাঙ্ক, ইনসিওরেন্স ইত্তাদি যুক্ত হয়েছে , অম্লীগ যখন আগেরবার ক্ষমতায় ছিল , তখন প্রচুর প্রাইভেট ব্যাঙ্ক হয়েছে দেশে। আর একটা উল্লকেকযজ্ঞ সার্ভিস এসেছে দেশে , তা হল real estate , মানুষের তুলনায় জমি কম এবং , বেশীরভাগ চাকুরী ঢাকা কেন্দ্রীক হওয়ায় অ্যাপার্টমেন্ট কেন্দ্রিক real estate বাবসা যুক্ত হয়েছে অর্থনীতিতে । বাবসা ভিত্তিক সেবা যেমন অ্যাকাউন্টিং এবং বিজনেস administration এর কদর বেড়েছে , university গুলোতে বিবিএ এবং এমবিএ এর ছড়াছড়ি শুরু হয়েছে। broadcasting এবং add বাবসা ভালই চলছে দেশে , অনেক টিভি চ্যানেল হয়েছে দেশে (আবার দুইটি বন্ধ হয়েছে রিসেন্টলি) । আরো পোটৈনশিয়াল সেবার কথা যদি বলি, হতে পারে শিক্ষা এবং tourism, শুধু নেপাল থেকে স্টুডেন্ট আসলেই হবে না , সার্ক এর সব দেশ থেকেই আস্তে হবে। অন্যদিকে , এমন বিশাল সম্মুদ্র সৈকত আমাদের , কক্স বাজারে international এয়ারপোর্ট করে কত ডলার ওয়ালা দেড়কে আকৃষ্ট করতে পারি। সবাই জানে , ভারত এর বাঙ্গালোর পৃথিবীর আইটি ক্যাপিটাল , শুধু তাই নয়, তাদের call সেন্টার এবং উন্নত দেশ এ back অফিস সাপোর্ট আনছে প্রচুর সবুজ মুদ্রা, আরো আছে software ডেভেলপমেন্ট , এর সবই আমরা করতে পারতাম , কিন্তু হল না। কয়েক বছর আগে এক প্রভাবশালি যুবক ডিজিটাল বাংলাদেশ এর সপ্ন দেখালেন , আমি ভাবলাম অনেক কিছুই হবে , ইন্টারনেট এর infrastructure আরো মজবুত হবে , submarine cable এর আরো লান্ডিং পয়েন্ট বসবে , সফ্টওয়্যার রপ্তানী হবে , call সেন্টার এর বাবসা আসবে , আরো কত কিছু , কিন্তু হল না কিছুই।

মুম্বাই এবং দুই মোকান

রাতের ট্রেন ছুটে চলছে , আমি নির্ঘুম এসি স্লীপার কোচ এর উপরের বাংকারে, আমার আশেপাশে সবাই নাক ডেকে ঘুমচ্ছে , অদূরে কেউ একজন দশ মিনিট পর পর বিশেষ শব্দ করছে , আর আমি নাক চেপে ধরছি। ভারতের এই ট্রেন সিষ্টেম এর সাথে আমি পরিচিত নই , একগাদা অপরিচিত লোককে আসে পাশে রেখে ঘুম আসার প্রশ্নই উঠে না , আমি মাঝে মাঝে বউকে ফোন করছি , ফিশ ফিশ করে কথা বলতে হচ্ছে , পাছে অন্যদের ঘুম ভেঙে যায় । একটু পরপর মনিবাগ চেক করছি , কেউ হাতিয়ে নিল নাকি ? নিচে রাখা জুতো জোড়ার জন্যও চিন্তা হচ্ছে । আমার গন্তব্য মুম্বাই সেন্ট্রাল ।


অফিস এর একটা কাজে মুম্বাই আসলাম , আহ, কত দিনের শখ এই শহর দেকবো, শেষে কাজের ছুতোয় আশা হল , কাজ শেষ হলে আজই ফিরে যাব। ট্রেন থমল কাক ডাকআ ভরে , ছয়টার দিকে , আমার অফিস খুলবে নয়টায় , আমার অফিস মানে আমি যে অফিস এ একটা কাজে এসেছি , কিন্তু স্টেশন এর কাছে অপেক্ষা করার মত কোনও রেস্টুরেন্ট খুজে পেলাম না , শেষে ট্যাক্সি করে চললাম গন্তব্যে , ইন্ডিয়ান বুল্স ফাইনান্সিয়াল সেন্টার এ। সকাল বলে রাস্তা ঘাট ফাকা , অন্য শহরের মত ছোট ছোট মোটর বাইকের অতো দৌড়ত্ত নেই। তার মধ্যে আজ রাখী বন্দন, বেশীরভাগ অফিস বন্ধ, তাই পনের মিনিটেই চলে আসলাম , কিন্তু যা ভেবেছিলাম তাই, ভিতরে নয়টার আগে যাওয়া যাবে না। কী আর করা , আবার খুজতে লাগলাম রেস্টুরেন্ট , আর এদিকে খিদেও খুব লেগেছে। শুনেছিলাম ট্রেনে খাওয়ার বাবস্থা আছে , কিন্তু সারা রাত কেউ তো একটা টু করল না ? যাই হক ইন্ডিয়ান বুল্স এর কাছে কোনও রেস্টুরেন্ট খুজে পেলাম না , এলাকাটা কমার্সিয়াল সেন্টার হলেও আসে পাশে সব বস্তি এলাকা , এমনকি বসর মত কোনও বেঞ্চ খুজে পেলাম না । আমি হাটতে লাগলাম , এবং একসময় একটা মোড়ে এসে পড়লাম যেখানে একটা ভ্রাম্যমান নাস্তার দোকান , আমি ছোট বেলা থেকেই রাস্তার পাশের দোকানে চা বিস্কুট , ছোলা মুড়ি খেয়ে অভ্বোষ্ট, কিন্তু ইণ্ডিয়াতে রুচি হয়না , বড় বেশি নোংরা যে । কিন্তু পেটে যে সুচর ডং, উত্সাহ নিয়ে গেলাম, নাস্তার অর্ডার করলাম , লাল রঙের হালুয়া এবং আলু পোহা মিক্স্ড , একদম গরম , বেশ সাদ লাগলো , বিশেষ করে হালুয়া টা অসাধারণ , এখনো মুখে লেগে আছে । মুম্বাই পাও ভাজির জন্য বিক্ষাত, কিন্তু এটা বোধয় ভরে পাওয়া যায় না। নাস্তার পড়ে খেলাম এককাপ গরম চা প্লাস্টিকের কাপে । ইণ্ডিয়াতে একটা জিনিস অবাক হবার মত , তা হল আগুন গরম চা । তবে পরিমাণে প্রায় ঔষধের ডোজের মত ।

এরপর এদিক ওদিক অনেক ঘোরাঘুরি করে শেষ পর্যন্ত অফিস এর ভিতর ঢুকতে পারলাম নয়টায় , এবং এক ঘন্টার মধ্যে কাজ হয়ে গেল, আমার রিটার্ন টিকিট কাটা দুপুরের ট্রেনে , এখনো হাতে বেশ কিছুটা সময় আছে , কিছু যায়গা ঘোরা যায় । ট্যাক্সি নিলাম , বললাম চল হাজী আলীর মজার , আমার বউ বারবার করে বলে দিয়েছে ওখানে যেতে , তার কী যেন একটা মানত আছে । আগেই বলেছি আজ রাখী বন্ধন , তাই ট্রাফিক নেই বললেই , দ্রুত পৌছে গেলাম । জয়গাটা অসাধারণ লাগলো , আর এই প্রথম ভাল করে চোখ মেললাম মুম্বাই এর হাই রাইজ বিল্ডিং , এক পাশে সমুদ্দর , আর এক পাশে ঝক ঝকে এক শহর , আমি তো ম্যান হাটন এর সাথে মিল ঘুজে পেলাম , বরং তার চেয়ে ভাল লাগলো , কী অসাধারণ শোভা, আর হাজী সাহেবের মজার বসছে সমুদ্রের উপরে , এখন জওয়ার বলে মজার যাওয়ার রাস্তা বন্ধ , দূর থেকেই ডেকতে হল , মাজারে অনেক মানুষ আটকে গেছে , দুপুরে যখন পানি নামবে তখন তারা আস্তে পারবে ডাঙ্গায়। কী আর করা , আমি অবশ্সই এখানে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করব না , ঠিক করলাম বউকে মিতথা বলব যে মজার জেয়ারত করেছি । এত সুন্দর রাস্তা, হাটতে শুরু করলাম , একসময় মনে হল , জয়গাটা খুব চেনা , কী বেপার? আমি তো কোনও দিন মুম্বাই আসিনি , তবে কী জট্টিসর হয়ে আগের জন্মে এখানে ছিলাম ? একটু পরেই মনে পড়ল , এখানে গভীর এক রাতে দাড়িয়ে ছিল করিনা কাপুরের প্রেতত্তা , তাই দেখে এক গাড়ি মারততক অ্যাক্সিডেন্ট করে পড়ে যায় সম্মুদ্রে , ছবির নাম তালাশ ।

হাতে আর বেশি সময় নাই , বহু দিনের শখ, অমিতাভ বচ্চনের বাড়ি ডেকতে যাব , একটা ট্যাক্সি ঠিক করলাম , সে চেনে, যুহু বীচ এ , বললাম চলিয়ে জি , প্রায় অনেক সময়ের পড়ে আমার ট্যাক্সি থমল একটা বাড়ির সামনে , নাম জলসা , এখানেই থাকতেন অমিতাভ , বলল ট্যাক্সি ড্রাইভার । এখন থাকেন ছেলে আর ছেলের বউ , আমার কাছে খুব ইম্প্রেসিভ মনে হল না , বেশ পুরোনো আমলের বাড়ি , চোখে পড়ার মত যা টা হল বাসার সামনে পাচ ছয়জন সিকিউরিটি গার্ড , বসে বাদাম ছিলাচ্ছে ,আর বাসার নিচ তলায় একটা সারির সো রুম মনে হল , সেখানে প্রমাণ সাইজের এক অইশ্হরিয়ার ছবি , আমি একটু হতাশ হলাম , তবে কী অমিতাভের ছেলের বউ এখন সারির দোকান খুলেছে ? তাও আবার নিজ বাসায় ?

যাই হক, এবার আমার ড্রাইভার কে বললাম , বিগ বি কোন বাসায় থাকে? আমাকে সেখানে নিয়ে যাও ভাই। ড্রাইভার বলল , ওকে বস, তারপর পাচ মিনিট পড়ে গাড়ি থমল যে বাসার সামনে তার নাম প্রচেষ্টা , এখনি নাকি থাকেন অমিতাভ । চার পাচ মিনিট থাকলাম যদি বস বের হন , কিন্তু না । অবশেষে গেলাম কাছেই, যুহু বীচ এ , আজ হওয়া বেশি বলে , সমুদ্রে একটা আলগা পাওয়ার এসেছে , বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে সামনে , ভালই লাগলো , আমার মোবাইল সেট দশ বছর আগের বলে ছবি তোলার অপশন নেই , তাই কোনও ছবি তুললাম না । বেশ ভালই লাগলো , তবে বীচ টা আরও সুন্দর করা যেত , বেশ যেন অপরিকল্পিত , সাগরের ধরেই সারি বাধা বাসা বাড়ি , হোটেল বা মোটেল হলেও ভাল লাগতো।

এরপর ট্যাক্সি কে কিং অফ বলীউড এর বাসায় যেতে বললাম , ড্রাইভার আবার অনেক পথ ঘুরে নিয়ে এল সেই হাজী আলীর মাজারের কাছে , অমিত অবাক , বললাম আরে বেটা , এটাইত আগে দেখাবি , তাহলে কিছু সময় সেভ করে মুভি পল্লীটা দেখে আস্তে পারলাম , ড্রাইভার আমার ভাঙ্গা হিন্দী কী বুজল জানিনা , সে বলল বরাবর । সরুক জী মোকান ভালই করেছে , একেবারে সামনেই সম্মুদর , বেশ ভাল লাগলো , কিন্তু হাতে সময় একদম নেই , ট্রেন ফেল করলে আর রিজার্ভেশন পাওয়া যাবে না , ইণ্ডিয়াতে ট্রেনের টিকিট কটকে রিজার্ভেশন বলে , এটা খুব একটা বড় প্রক্রিয়া , শুরু করলে শেষ হতে কয়েকদিন লাগে, আর শর্ট কাট উপায় হল দালাল ধরা , অথবা স্ট্যান্ডিং টিকিট কিনে , ট্রেনে কুলি ধরা , কুলিরা এখানে বস, তারা কিছু একটা করে দিবেই , কিন্তু অত হেপা করে লাভ কী? তাই ছুটলম স্টেশন এ , বাদশার সাথে আর দেখা করা হল না ।